জেরুজালেমের গুরুত্ব
এই ছোট একটি শহরকে ঘিরে
ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস। এমন আবেগ, স্মৃতি বা ঐতিহ্য নেই পৃথিবীর
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ শহর। তিনটি ধর্মের বিশ্বাসের কেন্দ্র। যে বিশ্বাসের সাথে
মিশে আছে ইতিহাস এবং রাজনীতি। ধর্ম ও রাজনিতি একে অপরের সাথে মিশে তৈরি হয়েছে অনেক
আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণ। এই পুরো প্রবাহের পথে কোন একটি শহর যদি কেন্দ্রে থাকে তবে
সেই শহরটি হল জেরুজালেম।ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যর তালিকায় থাকা ওল্ড সিটি নামে
খ্যাত।কিন্ত শহরটি বিভক্ত মুসলিম,খ্রিস্টান,ইহুদি,আর্মেনীয় ব্যাতিত যেখানে আছে প্রবিত্র
ধর্মের অনেক স্থাপনা।
ইহুদি ধর্মঃ ইহুদি ধর্মে জেরুজালেম
পবিত্রতম শহর। খ্রিস্টপূর্ব ১০ শতাব্দী হতে বংশানুক্রমিক এবং আধ্যাত্মিক মাতৃভূমি তাদের
কাছে।ক্লাসিক্যাল প্রাচীন সময়কালে জেরুজালেমকে পৃথিবীর কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা
হত,যেখানে ঈশ্বর বাস করতেন। হিব্রু বাইবেলে ৬৬৯ বার জেরুজালেমর কথা বলা হয়েছে।
হিব্রু বাইবেল অনুসারে প্রথম মন্দির, বর্তমানে যেটি টেম্পল মাঊণ্ট (হারাম আল
শরীফ)নামে পরিচিত।এটি রাজা সলোমন (সোলায়মান আঃ)৯৫০ খ্রিঃ পূঃ নির্মাণ করেন।
ব্যাবিলনিয়রা ৫৮০ খ্রিঃপূঃ এটি দখল করে ও মন্দিরটি ধ্বংস করে ইহুদিদের নির্বাসনে
পাঠায়। টেম্পল মাউন্টকে ঘিরে থাকা ওয়েস্টার্ন ওয়াল ইহুদিদের কাছে পৃথিবীর ভিত্তি
প্রস্তর হিসেবে স্বীকৃত।
খ্রিস্ট ধর্মঃ জেরুজালেমে যীশুর জন্মোর জন্য
স্থানটি খ্রিস্টধর্মের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাইবেল ৬৬টি পুস্তকের
একটি সংকলন। এটি ২ ভাগে বিভক্ত ওল্ড টেস্টামেন্ট আর নিউ টেস্টামেন্ট। বাইবেলের
ওল্ড টেস্টামেন্টে এই জেরুজালেম শহরের কথা উল্লেখ আছে। যীশুর জন্মো,বড়হওয়া, ক্রুশবিদ্ধকরন,যীশুর
পুনরুত্থান ও স্বর্গারোহণ এসকল কারনে জেরুজালেম খ্রিস্টানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলাম ধর্মঃ জেরুজালেম ইসলাম ধর্মে
একটি পবিত্রতম স্থান। কেননা নবী হযরত মুহাম্মাদ সাঃ নবুওয়াত লাভের একাদশ বছরে ৩২০
খ্রিঃ রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রাতে তিনি প্রথমে কাবা শরীফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত
বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামায়াতে
ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি সেখান থেকে সিরাতুল মুন্তাহায় আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ
করেন। এছাড়াও জেরুজালেম মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল। এটি ইসলামি স্থাপত্যের
সরবপ্রাচীন নিদর্শনও বটে।
মান্দাইসমেঃ এই ধর্মের লোকের সংখ্যা
খুবই কম। এখন এটি একটি ছোট গোষ্ঠী। দক্ষিণ ইরান ও ইরাকে এদের অবস্থান বিদ্যমান।
ইয়াহিয়া(জন ব্যাপটিস্ট) এই ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। তিনি জেরুজালেমে
জন্মগ্রহণ করেন বলে মান্দাইসমেদের কাছে এই শরটি গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং ১২৫ বর্গকিলোমিটার
এর এই শহর সব ধর্মের লোকদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরটি মুসলিমদের কাছে আল কুদস,
খ্রিস্টানদের কাছে জেরুজালেম ও ইহুদিদের কাছে ইরুশালাইম নামে পরিচিত হলেও
জেরুজালেম নামেই অধিক খ্যাত। হাজার বছর ধরে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র
নগরীর মর্যাদা এই জেরুজালেমেরই।