ক্রুসেড শব্দটি এসেছে
লাতিন শব্দ (crux) থেকে। যার অর্থ (cross) ক্রস। এর সংজ্ঞা নিয়ে মুসলমান গবেষক ও ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের মধ্যে দ্বিমত
থাকলেও অধিকাংশগণই একে ক্রুসেড বলে অবিহিত করেছেন। এশিয়ার মুসলমান ও ইউরোপের
খ্রিস্টানদের মধ্যে সুদীর্ঘকালের ঘৃণা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-কলহের বহিঃপ্রকাশ এই
ধর্মযুদ্ধ। তাই এই যুদ্ধের কারন,ফলাফল ও তাৎপর্য ছিল সুদূরপ্রসারী।
ক্রুসেডের
প্রেক্ষাপটঃ ক্রুসেডের প্রেক্ষাপট ভালভাবে জানতে হলে তার অতীত ইতিহাস জানতে হবে।
মধ্যযুগের শুরু থেকেই ইউরোপ ব্যাপী খ্রিস্টধর্মের বিস্তার ঘটতে থাকে। আরবভূমি থেকে
ইসলাম ধর্মের বিজয়াভিজান ছড়িয়ে পরার আগ পর্যন্ত খ্রিস্ট ধর্ম কোন রুপ বাধার
সম্মুখীন হয়নি। কিন্তু ইসলাম ধর্ম দ্রুততার সাথে বিস্তৃত হতে থাকে। ক্রমে ইসলাম
ধর্ম প্রাচ্যের খ্রিস্টান অধ্যুষিত অঞ্চল এবং ইউরোপ এর দিকে অগ্রসর হয়। ফলে ধর্মীয়
দৃষ্টিভঙ্গিতে খ্রিস্টান ও মুসলমান পরস্পর বিরোধী অবস্থানে এসে পৌছায়।
৬৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে
সিরিয়া,এশিয়া মাইনর,স্পেন প্রভৃতি দেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এই দুই ধর্ম নেতা
ও রাজশক্তিসমূহ পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওমর রাঃ এর
শাসনকালে (৬৩৪-৬৪৪) মুসলিম সেনাপতি আমর ইবনুল আস ৪ মাস জেরুজালেম অবরুদ্ধের পর
জেরুজালেমের প্রধান ধর্মযাজক সেফ্রেনিয়আস একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করলে জেরুজালেম
মুসলমানদের অধিকারভুক্ত হয়। স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম সম্পাদনের জন্য খলিফাকে দিয়ে
একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। যীশুর জন্ম জেরুজালেমে হওয়াই বিপুল সংখ্যক
তীর্থ যাত্রী তীর্থ কর্ম সমাধা করতে জেরুজালেমে আসতো। ওমরের সময়কাল হতে আব্বাসীয়
খলিফাগণ পর্যন্ত তীর্থ যাত্রীদের প্রতি বাধা দেয়া হয়নি। কিন্তু ফাতেমি বংশীয় শাসক
আল হাকীম(৯৯৬-১০২১) ১০০৯ খ্রিঃ জেরুজালেমের পবিত্র কতিপয় গির্জা ধ্বংস করলে ধর্মীয়
ক্ষেত্রে প্রচণ্ড উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে ১০৭৬ খ্রিঃ পর হতে বাগদাদ কেন্দ্রিক
সেলজুক তুর্কীগণ খ্রিস্টানদের উপর নির্যাতন শুরু করলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
সেলজুক তুর্কীগণ ১০৭১ খ্রিঃ বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের অংশ বিশেষ দখল করে নেয়। ফলে
ইউরোপ বাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধের সৃষ্টি হয়। এর
প্রত্যক্ষ ফল হল প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্রুসেড যুদ্ধ।